সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ শুধু বাংলাদেশের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠই নয় বরং দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যে লালিত মেধা, মনন এবং দর্শন দিয়ে শিক্ষার্থী তৈরির এক বিশাল সূতীকাগার। ১৯০৩ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে এর পদযাত্রা শুরু হয়। তারপর দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ডালপালা মেলে পরিণত হয় আজকের এই সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। যে সময়টাতে নারী শিক্ষা ছিল পর্দার অন্তরালে, গৃহকোণে, সে সময় থেকেই এ বিদ্যাপীঠ নারী শিক্ষার আলোকবর্তিকা হয়ে আলোকিত করে আসছে এ অঞ্চলের হাজার হাজার নারী শিক্ষার্থীকে। বর্তমানে এ বিদ্যালয়টি শিক্ষার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। শুধু লেখা-পড়ার মাধ্যমে পাস করা শিক্ষার্থী তৈরিই এ বিদ্যালয়ের লক্ষ্য নয় বরং উন্নত নৈতিকতা, দায়িত্বশীল এবং আত্মমর্যাদা সম্পন্ন নাগরিক তৈরি এর অন্যতম লক্ষ্য। শিক্ষার্থীর মানবিক, সামাজিক এবং নৈতিক গুনাবলী বিকাশের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের গভীর মনোযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের সুপ্ত প্রতিভাকে যথাযথভাবে বিকশিত করতে পারে এজন্য শুধু লেখা-পড়াই নয় বরং এর সাথে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর পর্যন্ত সুযোগ রয়েছে এখানে। শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের অন্তনির্হিত প্রতিভাকে আবিষ্কার করতে পারে এজন্য বিদ্যালয়ে নিয়মিত বক্তৃতা, আবৃত্তি, বিতর্ক, নৃত্য, চিত্রাংকন, সংগীত, চিত্র প্রর্দশনী, গণিত, কুইজ প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞানমেলাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। শারীরিক, মানসিক বিকাশের জন্য ফুটবল, হ্যান্ডবল, ব্যাটমিন্টন এবং গার্ল গাইড্সের বিভিন্ন কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। সাহিত্য, বিজ্ঞান এবং খেলাধূলা চর্চার এক উৎকৃষ্ট চারণক্ষেত্র এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষিত এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক মন্ডলী রয়েছেন যারা তাদের দক্ষতা ও মেধা দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে যথাযথভাবে গড়ে তুলতে দৃঢ় প্রত্যয়ী। মাল্টিমিডিয়া এবং তথ্য প্রযুক্তির পর্যন্ত সুযোগ রয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আমি আশাবাদী, এ বিদ্যালয় তার ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আগামীতেও এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মেধা ও মনন এবং আলোকিত মানুষ তৈরির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।
আমাদের সকলের অঙ্গীকার হোক মাদকমুক্ত, জঙ্গীবাদ বিরোধী, ধর্মীয় কুসংস্কারমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন। শিক্ষার্থীরা এখানে বেড়ে উঠুক মূল্যবোধে উজ্জীবিত আদর্শ নাগরিক হয়ে। শিক্ষার্থীরা এখানে যেনো উন্নত, সভ্য এবং আধুনিক দেশ গঠনের উপযোগী হয়ে ওঠে। তারা যেনো শৃঙ্খলা, সহনশীলতা, সহমর্মিতা এবং আদর্শ মূল্যবোধের শিক্ষা পায় এবং বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করার দক্ষতা অর্জন করতে পারে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এ অঞ্চলের নারী শিক্ষা বিস্তারে শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে রেখে আসছে যুগান্তকারী অবদান। এ প্রতিষ্ঠানটি শুধু শিক্ষার্থীদের নয় বরং সমগ্র সিলেটবাসী তথা জাতির গৌরব। সকলের সদিচ্ছা, আন্তরিকতা ও সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে এর ঐতিহ্য সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হোক, এটাই আমাদের কাম্য।