বিদ্যালয় মোদের বিদ্যালয় এখানে সভ্যতারই ফুল ফোটানো হয়
হ্যাঁ এটা আমার সেই প্রিয় বিদ্যালয়, সরকারী অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, সিলেট। যা ১৯০৩ সালে প্রতিষ্টিত হয়ে কালপরিক্রমায় ১১৫ বছর অতিক্রম করে বর্তমানে দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ। সিলেট শহরে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি বিশাল বটবৃক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এই ১১৫ বছরে এই বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা লাভ করে যারা বের হয়েছেন তারা সবাই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্ব স্ব প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে সুনাম ও মর্যাদাপূর্ণ আসনে আসীন হয়েছেন।
১৯০৩ সালে প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে অদ্যাবধি যাঁরা এই বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন তারা সবাই স্ব প্রতিভায় ভাস্বর। বর্তমান প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) জনাব বাবলী পুরকায়স্থ একজন দক্ষ, যোগ্য, সৃজনশীল, মেধাবী প্রশাসক হিসেবে বিদ্যালয়ের সার্বাঙ্গীন মঙ্গল সাধনে সদাতৎপর তাঁর প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি পেয়েছেন মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম পুরস্কার। তিনি মাতৃস্নেহে যেমন আগলে রেখেছেন তাঁর শিক্ষার্থীদের ঠিক তেমনি অভিবাবক হিসেবে একইবৃন্তে বেঁধে রেখেছেন শিক্ষকদের। এই বিদ্যালয়ে যে দুজন সহ-প্রধান শিক্ষক রয়েছেন তাদের সঠিক তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের সঠিক কার্যাবলি সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়ে বিদ্যালয় তার কাঙ্ক্ষিত সাফ্যলের দিকে সর্বদা অগ্রসরমান। বর্তমান সময়ে বিজ্ঞান মনস্ক যুগোপযোগী শিক্ষার উপযুক্ত ধারন ও বাহক হিসেবে এই বিদ্যালয়ে রয়েছে মাল্টিমিডিয়া শ্রেনিকক্ষ, বিজ্ঞান গবেষনাগার, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, ল্যাবরেটরী, গার্ল গাইডস কক্ষ, বিতর্ক ক্লাব ইত্যাদি এই বিদ্যালয়ে রয়েছেন বিষয়বিত্তিক ও বিভিন্ন প্রশিক্ষনে (বি. এড, এম.এড,সি.পি.ডি সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতিতে, কারিকুলাম, আই.সি.টি) প্রশিক্ষিত একঝাঁক সৃজনশীল মেধাবী দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক যারা মা-বাবার পরে তাদের শিক্ষার্থীদের সঠোপরি সহযোগীতার কন্য সদাতৎপর। বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন পরীক্ষার ফলাফল ছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট, এস.এস.সি ও এইচ. এস.সি পরীক্ষা সহ মেডিকেল ও বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষায় এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরাবরই চমৎকার মেধার স্বাক্ষর রেখে আসছে। বিভিন্ন জাতীয় দিবস যেমন পাঠ্যপুস্তক উৎসব দিবস- (১লা জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস (২১শে ফেব্রুয়ারী) জাতীয় শিশু দিবস (১৭ই মার্চ) মহান স্বাধীনতা দিবস (২৬শে মার্চ) জাতীয় শোক দিবস (১৭ই আগষ্ট) মহান বিজয় দিবস (১৬ই ডিসেম্বর) যথাযথ ও ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে পালন করা হয়। লেখাপড়ার পাশাপাশি এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন মাধ্যমে স্বপ্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিতর্ক, নাচ, গান, আবৃত্তি অভিনয়, রচনা প্রতিযোগীতা, সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগীতা, বিজ্ঞান মেলা, ক্বেরাত প্রতিযোগিতা প্রভৃতী ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন পুরষ্কার ভূষিত হয়েছে। অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তব প্রয়োগের জন্য বৎসরে একবার শিক্ষা সফরে নিয়ে যাওয়া ছাড়াও বিদ্যালয়ের ভেতরে অনুষ্টিত হয় বিজ্ঞান মেলা, বই মেলা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহ। তা ছাড়া ক্রিড়া প্রতিযোগিতা, মিলাদ মাহফিল, সরস্বতী পুজা ইত্যাদি অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
বিদ্যালয়ে রয়েছে বিশাল মাঠ যেখানে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ক্রিড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। রয়েছে খনন পুকুর যেখানে বিদ্যালয়ের সাঁতার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
দেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বের পদচিহ্ন পড়েছে বিভিন্ন সময়ে এই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাই এখনকার শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে থেকে দেখার মাধ্যমে নিজেকে আরো বেশি যোগ্য করে আলোকিত মানুষরূপে গড়ে উঠতে উৎসাহবোধ করে। তাই কেন পড়বেন এই বিদ্যালয়ে এই সহজ প্রশ্নের প্রতিউত্তরে আমার একটাই বক্তব্য আলোকিত সুন্দর মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার উদ্দেশ্য যাতে আমার ভবিষৎ উত্তরসূরী বলতে পারে।
‘হে আকাশ তুমি সরে দাঁড়াও
আমি মাথা উঁচু করে দাড়াবো’ ।।
পরিশেষে একইসাথে একজন শিক্ষার্থী/শিক্ষক হিসেবে বলতে চাই
‘ভালো থেকো প্রিয় বিদ্যালয়,
যতখানি চাই তাঁর চেয়েও শুভেচ্ছা তুমায় বেশি’।